খবর ডেক্সঃ-(রায়হান হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী আকবরের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর নিজেকে কেন আবার সরিয়ে নিলেন সেই আইনজীবী তা ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিজেই। যা নিচে হুবহু তুলে দেওয়া হলো)
‘বিশ বছরের ওকালতি জীবনে হত্যা-অপহরনসহ অনেক মামলা পরিচালনা করেছি। আমার কাছে রায়হান হত্যা মামলাও তেমনি একটি মামলা ছিল। অধিক অর্থ প্রাপ্তি নয় বরং রায়হানের পক্ষে তার মামলা পরিচালনার জন্য যোগাযোগ করা হলে পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই মামলাটি গ্রহন করি। হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইনের মামলাটি আমার কাছে ছিল একেবারেই নতুন ধরনের এবং চ্যালেন্জিং। তাই আগ-পিছ না ভেবেই আমি মামলাটি গ্রহন করি। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই মামলাটি আমার পেশাগত জীবনে আরেকটি নতুন পালক সংযুক্ত করবে। সিলেটের আইনাজ্ঞনে এই আইনে ইতিপুর্বে এরুপ কোন মামলা হয় নাই। তাই এই মামলা পরিচালনা করে আমি আমার আইনাংগনে পথচলায় অনেক সমৃদ্ধ হতে পারব, অর্থ প্রাপ্তি কখনোই আমার কাছে মূখ্য ছিল না। আকবরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে নিশ্চিতভাবেই তার সত্যতা পাওয়া যাবে। আইনী সেবা পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে দন্ডিত করা যায় না। তদুপরি এই মামলাটি সর্বোচ্চ দন্ডাদেশের মামলা। এরুপ মামলায় আসামী আইনজীবী নিয়োগে অক্ষম হলে রাষ্ট্র তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে বাধ্য। কোন কারনে যদি আসামীপক্ষ আইনজীবী পেতে ব্যর্থ হয়, তবে পুরো বিচার প্রক্রিয়াই আটকে যাবে। বিচার প্রার্থীই তাতে বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এই দৃষ্টিকোন থেকে আকবরের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত হতে আমি সম্মত হই। কিন্তু পরবর্তীতে রায়হানের বোন ফেসবুক লাইভে এসে আইনজীবী নিয়োগের আবশ্যকতা স্বীকার করলেও এরুপ নিয়োগের নিন্দা জানিয়ে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে আসামীপক্ষে আইনজীবী নিয়োগ তিনি ভালোভাবে নেননি। স্বজন হারানো যে কারো পক্ষে এমন আবেগতাড়িত হওয়া খুবই স্বাভাবিক ।
কিন্তু তার লাইভের প্রতিক্রিয়ায় কিছু মানুষের চরম নেতিবাচক ও অশালীন মন্তব্য আমাকে যারপরনাই হতাশ করেছে। কিছু অন-লাইন পত্রিকা এবং কিছু মানুষ আমার শ্রদ্ধাভাজন সিনিয়রকে জড়িয়ে ও আমার পরিবার সম্পর্কে বিরুপ ও অরুচিকর মন্তব্য করেছে যা আমার সিনিয়র ও আমার পরিবারকে আহত করেছে। আমার কারনে আমার সিনিয়র বা পরিবার এরুপ স্থুল আক্রমণের শিকার হোক তা কখনোই কাম্য হতে পারে না। তাই আমার শ্রদ্ধাভাজন সিনিয়র এবং পরিবারকে এইরূপ অশালীন ও স্থুল আক্রমন হতে রক্ষার স্বার্থে আকবরের পক্ষে আইনী লড়াই হতে বিরত হলাম এবং সে লক্ষ্যে আমি গত ২৪ ডিসেম্বর’২০ ইং তারিখে আকবরের পক্ষে ইতিপুর্বে দায়েরকৃত ওকালতনামা সারেন্ডার করেছি এবং এ সংক্রান্ত একটি আবেদনও বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি। আমি আবারো সবাইকে এটা নিশ্চিত করতে চাই, অর্থের লোভে নয়, বরং পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই আমি মামলা পরিচালনায় সম্মত হয়েছিলাম।
সিলেটের আদালত পাড়ায় আমার এই দুই দশকের পথচলায় আমি চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ সততা আর নিষ্ঠার সাথে আইন পেশা পরিচালনা করা। যারা আমাকে চেনেন তাঁরাই এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। এ মামলায় আইনজীবী নিযুক্ত হওয়ায় আমাকে নিয়ে যারা বিরুপ মন্তব্য করেছেন,তাদের স্জ্ঞাতার্থে বলতে চাই যে,আকবর কোন আইনজীবী না পেলে এই মামলার বিচার হবে না, সেটা যেমন রায়হানের পরিবারের জন্য সুখকর হবে না,তেমনি তা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠারও অন্তরায় হবে।সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।’