অক্টোবর ২১, ২০২০
৯:২৬ অপরাহ্ণ

আলুর মতি গতি

খবর ডেক্সঃ- কদিন ধরে খুব বাড় বেড়েছে আলুর! কারো সঙ্গে তেমন কথাই বলছে না, কারো সঙ্গে মিশছেও না। ভাবটা যেন ‘মুই কী হনু রে!’ এদিকে আলু ছাড়া নিরামিষ অন্যদের অবস্থা তো কিছুটা হলেও দিশেহারা।

একটু আগে কাচ্চি বিরিয়ানি এসেছিল আলুর কাছে। আলু তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তোমার সঙ্গে আমি আর যাবো না ভায়া! অমন সস্তা কাচ্চি বিরিয়ানির সঙ্গে আমি গেলে আমার দাম বজায় থাকবে না! কাচ্চি বিরিয়ানির তো মাথায় হাত! আলু যদি বিরিয়ানিতে না থাকে তা হলে মানুষ কী আর খেতে আসবে? কাচ্চি বিরিয়ানি কাঁচুমাচু করে বলে, ‘দোহাই আলু ভাই, আপনি আমারে ছাইড়েন না। আপনাকে প্রাপ্য সম্মান দেয়া হবে।’
আলু বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! সামান্য কাচ্চি বিরিয়ানি হয়ে তুমি আমাকে ভাই বলে ডাকছ! আমাকে স্যার ডাকবা, স্যার! যাও এখন, তোমার সঙ্গে আমি আর নাই।’

কাচ্চি বিরিয়ানি মন খারাপ করে চলে গেল। এরপর এলো বছরের নতুন শিম। শিম এসে বলল, ‘আলু স্যার, কেমন আছেন? ভাবছি এই শীতে আমি আর আপনি একদম জমিয়ে দেবো! মানুষ খাবে আর হাত চাটবে।’
আলু ধমক দিয়ে বলল, ‘খামোশ বদতমিজ! সামান্য দুই টাকার শিম হয়ে তুই আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিস কীভাবে? তোর কী আছে যে তুই আমাকে সঙ্গে পেতে চাস?’
আলুর কথা শুনে শিমের তো আলুথালু অবস্থা। বেজার হয়ে চলে গেল শিম।
এবার এলো বেগুন। বেগুনকে দেখেই আলু তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল। চিৎকার করে বলল, ‘ওরে নির্গুন বেকুব বেগুন, তোকে আমার সামনে আসার এজাজত কে দিয়েছে?’
আলুর ঝাড়ি খেয়ে বেগুনের চোখ ছলছল করে উঠল। অসহায় ভাবে সে আলুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘খালুসাহেব…আজ আমি গরিব হতে পারি, কিন্তু মনে রাখবেন, আসছে রোজায় আমি সবাইকে সোজা করে দেবো!’

‘আরে যা যা, তোর হুমকিতে আমি ভয় পাই নাকি! বাজারে আছে সিন্ডিকেট! ওরা মওকা বুঝে ওই সময়ে আমাকে ঠিকই সবার উপরে তুলে রাখবে।’
আলুর কামরা থেকে বের হয়ে বেগুন দেখে, বাইরে ফুলকপি, পটোল, ঝিঙ্গা, ধুন্দুল, রুইমাছ, কাতলামাছ ও পুঁটিমাছসহ আরো অনেক নিরামিষ আর আমিষ আলুর সঙ্গে মিলমিশের আশায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশ মাছ বেচারা আসতে পারেনি। কিন্তু সেও তার প্রতিনিধি করে পুঁচকে পুঁটিমাছের মাধ্যমে আলুর

উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছে! আলুর সামনে যেতে পুঁটি মাছের লেজ তখন কাঁপছে।
এ সময় একটি দামি গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে নামল কাঁচামরিচ। কাঁচামরিচকে দেখেই রুইমাছ ফিসফিস করে ফুলকপিকে বলল, ‘একটা সময় ওরে রাস্তাঘাটে পড়ে পচতে দেখছি। আর এখন গাড়িতে চড়ে!’

কাঁচামরিচ কারো দিকে না তাকিয়ে গটগট করে ভেতরে চলে গেল। তার নাকি আলুর সঙ্গে কী একটা জরুরি কাজ আছে। কাঁচামরিচ আলুর খাস কামরায় ঢোকার পরপরই ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে হাজির হলেন পেঁয়াজ। পেঁয়াজকে দেখেই পুঁটিমাছ ভুল করে তাকে নাম ধরে ডেকে বসল।

‘কী রে পেঁয়াজ, আমি পুঁটি। মনে আছে আমাকে? ওই যে তুই আর আমি মিলে দোপেঁয়াজা হতাম!’
পুঁটির কথা শুনে পেঁয়াজ তার সিকিউরিটিকে কানে কানে কী যেন বলল। অমনি সিউরিটির লোক এসে পুঁটিকে তুলে নিয়ে গেল। তাই দেখে পটোল বলল, ‘এই দেশে পুঁটিরাই কেবল পটোল তোলে! রুই-কাতলারা সবসময় বহাল তবিয়তে থাকে।’

পেঁয়াজ ঢুকল গোল আলুর কামরায়। বাইরে সবাই খুব টেনশনে আছে। ভেতরে কী হচ্ছে! আলু কাউকে পাত্তা না দিয়ে কেনই বা পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচকে ডেকে পাঠিয়েছে! ঘটনা কিছু একটা হচ্ছে মনে হয়।

ঠিক সেই সময় এক গরিব কৃষক এলেন আলুর সঙ্গে দেখা করতে। খবর রটে গেল, তিনি নাকি আলুর নিবন্ধিত উৎপাদক! আলু কিছুতেই কৃষককে তার খাস কামরায় ঢুকতে দিলো না। চোখ লাল করে কৃষক জানালেন, আলু নাকি তাকে বলেছে, ‘এ দুনিয়ার আকাশে বাতাসে এনে তুমি আমাকে কী দিয়েছ? সাত টাকা দরে বস্তায় ভরে বিক্রি করে দিয়েছ। আজ আমার যত মান-সম্মান আর দাম, সব আমাকে দিয়েছে ওই সিন্ডিকেট! সাত টাকা থেকে ষাট টাকায় নিয়ে গেছে! বিরক্ত না করে এখন সসম্মানে বিদেয় হও।’
গরিব কৃষক চলে যেতেই বাকি সবজি ও মাছেরা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। বাঁধাকপি বলল, ‘আলুর খুব অহঙ্কার হয়েছে। একদিন ওর পতন হবেই।’
পাশ থেকে ধনে পাতা বলল, ‘কচু হবে! অহঙ্কার আর সিন্ডিকেট দুটোই দিনকে দিন যে হারে বাড়ছে কিছুই হবে না আলুর।’

আলুকে নিয়ে নানান আলাপ-আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন আচমকাই আলুর খাস কামরার প্রধান দরজাটি খুলে গেল। সবাই অবাক হয়ে দেখল, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ আর আলু একসঙ্গে মিলে আলুভর্তা হয়ে বেরিয়ে আসছে!

নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে পট করে পটোল বলেই ফেলল, ‘একি আলু! কদিন ধরে এত ভাব দেখালি। এখন তো সেই আলু ভর্তাই!’
কথাটা আলুর কানে যেতেই আলু ধমকে উঠে বলল, ‘খামুশ বেয়াদব কোথাকার! এটাকে আলুভর্তা বলে না। বলে স্ম্যাশড পটেটো!’
পরক্ষণই সিকিউরিটির লোকজন এসে পটোলকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে গেল। তাই দেখে বাকি শাকসবজি একযোগে বলল, ‘‘একেই বলে ‘পটোল তোলা’!’’

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *