আজকের খবরঃ ২০০২ সালে বনশ্রী আদর্শগ্রাম নামে ২২.৭৫ একর জায়গা নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমা গ্রামে স্থাপিত হয় গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প। প্রথমে ২শ’টি পরিবারকে দেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ১শ’টি পরিবারকে জনপ্রতি ৮ শতক করে জমিতে ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়।
খাস খতিয়ানের এই জায়গার নিচে রয়েছে প্রচুর খনিজ সম্পদ পাথর। সরকারের এই জমির প্রতি শুরু থেকেই লুলুপ দৃষ্টি ছিল স্থানীয় পাথরখেকু চক্রের। যে কারণে ২০০৫ সালে ১১ পাথরখেকুকে চিহ্নিত করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে কোম্পানীগঞ্জ ভূমি অফিস। বর্তমানে এই চক্রের মূল হোতা আদর্শ গ্রামের আনোয়ার হোসেন লালা, উৎমা গ্রামের জমসিদ আলী ও কামালবস্তি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে আবারও শুরু হয়েছে সরকারি এই জায়গা থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন। সরকারের দেওয়া এ জায়গায় বসবাস করেন নিরীহ মানুষ। তাদের জনবল বা আধিপত্য না থাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক এই চক্রটি দখল করে নিচ্ছে তাদের জমি। যার ফলে উৎমা বাজারের সাথে গ্রামের সংযোগ সড়ক প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে ঝুঁকির মুখে।
সরকারের দেওয়া বনশ্রী আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা কলছুমা আক্তার এই চক্রের বিরুদ্ধে ২৯ নভেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসক ও কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও’র মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণকৃত অভিযোগে কলছুমা আক্তার উল্লেখ করেন আনোয়ার হোসেন লালা, জমসিদ মিয়া ও নিজাম উদ্দিন তাকে বিভিন্ন সময় সরকারের দেওয়া আদর্শগ্রামের এই জায়গা ফেলে অন্যত্র যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। নভেম্বরের ২২ তারিখ সন্ধ্যায় পাথর খেকু এই চক্রটি কলছুমার বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার উপর হামলা করে। এ সময় তার ঘর থেকে ২ ভরি স্বর্ণালংকার, ৫টি গরু, হাস মোরগসহ নগদ ১ লক্ষ টাকা নিয়ে যায়। অভিযোগে কলছুমা বেগম আরো উল্লেখ করেন, এই পাথর খেকু চক্র তার বাড়িতে জোর পূর্বক দখল করে পাথর উত্তোলন করছে।
পাথর খেকু চক্রের উৎখাতের কারণে উৎমা বনশ্রী আদর্শগ্রামের সরকারের দেওয়া ১ শ’টি পরিবারের মধ্যে এখন বসবাস করছে মাত্র-৫৬টি পরিবার।
এদিকে গত ২৩ নভেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম উৎমা এলাকা পরিদর্শনের খবর পেয়ে রাতারাতি ১২ ঘন্টার ভিতর এই এলাকায় রোপণ করা হয় কলাগাছ। উৎমা ছড়ার পশ্চিম পাশে লিজ বহির্ভুত জায়গা থেকে পাথর উত্তোলন করে যে গর্ত হয়েছিল, সেগুলো ভরাট করে রাতারাতি কলাগাছের বাগান তৈরি করা হয়েছে। আবার একদিনের এইসব কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোরপূর্বক তাদের বাড়ি থেকে এসব কলারগাছ কেটে এনে এখানে রোপণ করা হয়েছে। ২২ নভেম্বর রাত ৯টা থেকে সকাল পর্যন্ত এইসব কলাগাছ রোপণ করা হয়। যাতে জেলা প্রশাসক দেখলে বুঝতে না পারেন এখান থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন করা হয়। উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জেলা প্রশাসকের অফিসে পাঠানো প্রতিবেদনেও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় যে, প্রভাবশালী পাথরখেকুদের দ্বারা জোরপূর্বক সরকারি এসব জমি দখল করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। আর এই পাথর খেকুদের চিহ্নিত করে মামলা করেছিল ভূমি অফিস।
সিলেটের জেলা প্রশাসক উৎমা আদর্শগ্রাম এলাকার ১২৫৭- 3S পিলার থেকে 5S পিলার এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে তাদের বাড়ি-ঘর ধ্বংস করা হচ্ছে। তিনি সরেজমিনে উৎমা ছড়ার পূর্ব পাড়ের বাঁধ থেকে পাথর উত্তোলন করার চিহ্নও দেখতে পান। সীমান্ত এলাকা ও লিজ বহির্ভুত এসব যায়গা থেকে যাতে আর কেউ পাথর উত্তোলন করতে না পারে সে জন্য তিনি উপস্থিত বিজিবি সদস্যদের নির্দেশ দেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ এরশাদ মিয়া বলেন, সরকারি জমি ধ্বংস করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। আমি সরেজমিনে উৎমা বনশ্রী আদর্শগ্রাম পরিদর্শন করবো।