ডিসেম্বর ৯, ২০২০
৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ

এভারেস্টের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় এক মিটার, চীন ও নেপালের মতৈক্য

খবর ডেক্সঃ- নেপাল এবং চীন যৌথভাবে ঘোষণা করেছে যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের উচ্চতা আগের সরকারি পরিমাপের চেয়ে ৮৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে।দুই দেশ এভারেস্টের নতুন যে উচ্চতায় একমত হয়েছে সেটি হল ৮,৮৪৮ দশমিক ৮৬ মিটার। এর আগে এভারেস্টের উচ্চতা মাপার ক্ষেত্রে পর্বতচূড়ার তুষারসহ উচ্চতা মাপা হবে কিনা তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতানৈক্য ছিল।

এর আগে চীন তার সরকারি পরিমাপে এভারেস্টের উচ্চতা ঘোষণা করে ৮,৮৪৪ দশমিক ৪৩ মিটার, যা ছিল নেপালের হিসাবের চেয়ে চার মিটার কম।এভারেস্ট চীন এবং নেপালের সীমান্তে এবং দুটি দেশ থেকেই পর্বতারোহীরা এভারেস্টে ওঠেন।

নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জরিপ বিভাগ জানিয়েছে এভারেস্টের নতুন উচ্চতা মাপতে দুই দেশ সমন্বিতভাবে কাজ করেছে এবং মাপার পদ্ধতি নিয়ে মতৈক্যের ভিত্তিতে তারা কাজ করেছে।চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত বছর কাঠমাণ্ডু সফর করার সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থানের নতুন উচ্চতার মাপ দুই দেশ একযোগে ঘোষণা করবে।

সরকারি মাপে গরমিলের কারণ কী ছিল?
চীনা কর্তৃপক্ষ আগে বলেছিল এভারেস্টের উচ্চতা মাপতে হবে শুধু পাথরের উচ্চতার হিসাবে, আর নেপালী কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল পর্বতচূড়া যে বরফে ঢাকা সেই বরফের উচ্চতাও এই মাপে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
এভারেস্ট চূড়ার উচ্চতা চীনা জরিপকারীরা আগে মেপেছিলেন ২০০৫ সালে এবং তার ভিত্তিতে চীন তাদের উচ্চতার হিসাব দিয়েছিল।

নেপাল সরকার ২০১২ সালে বিবিসিকে বলে যে চীনের মাপা উচ্চতা মেনে নেবার জন্য চীন তাদের ওপর চাপ দিচ্ছে। এরপরই নেপাল সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা এভারেস্টের উচ্চতা নতুন করে মাপবে “যাতে এ নিয়ে বিভ্রান্তি চিরকালের মত দূর হয়।”

মাউন্ট এভারেস্টের যে উচ্চতা নেপাল ব্যবহার করছিল, অর্থাৎ ৮,৮৪৮, সেটা ভারতের এক জরিপে নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। এই প্রথম নেপাল প্রথমবারের মত তাদের নিজস্ব জরিপ চালাল।

নেপালে চারজন জরিপকারীকে এই মিশনে যাবার আগে দু’বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।”এর আগে আমরা নিজেরা কখনও জরিপ চালাইনি,” বিবিসিকে বলেছেন নেপালের জরিপ বিভাগের মুখপাত্র দামোদর ঢাকাল।”আমাদের টিমে এখন দক্ষ তরুণ সদস্য রয়েছে, যারা এভারেস্টের চূড়ায় উঠতেও সক্ষম, কাজেই আমরা এখন নিজেরাই জরিপ চালাতে সক্ষম।”

এই উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন কেন?
কিছু ভূতত্ত্ববিদ বলে থাকেন ২০১৫ সালে যে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, তা এভারেস্ট পর্বতের উচ্চতায় হেরফের ঘটিয়ে থাকতে পারে। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে নেপালে মারা গিয়েছিল প্রায় ৯০০০ মানুষ এবং ওই ভূমিকম্পে পাহাড় ধস হয়েছিল, যাতে চাপা পড়েছিল ওই পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার নিচে যে বেস ক্যাম্প ছিল তার অনেকটাই। অন্তত ১৮জন পর্বতারোহী মারা গিয়েছিলেন।
কোন কোন ভূতত্ত্ববিদ বলেছিলেন ভূমিকম্পের ফলে ধসের কারণে এভারেস্টের চূড়ার বরফ হয়ত উচ্চতায় খাটো হয়ে গেছে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন যে কাঠমাণ্ডুর মূলত উত্তরে এবং ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের খুব কাছে হিমালয়ের অন্য কয়েকটি পর্বতচূড়া যেমন লাংটাং হিমালের উচ্চতা ভূমিকম্পের পর প্রায় এক মিটার কমে গেছে।তবে অন্যরা আবার যুক্তি দেন যে, হিমালয়ের অবস্থান যে টেকটনিক প্লেটের ওপর, সেই প্লেটের নড়াচড়ার কারণে এভারেস্টসহ হিমালয়ের আরও কয়েকটি শৃঙ্গের উচ্চতা অতীত বছরগুলোতে আসলে কমার বদলে সম্ভবত বেড়েছে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এর উল্টোটা ঘটতে পারে।”সে কারণেই ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর আমরা পাহাড়টির উচ্চতা নতুন করে মাপার সিদ্ধান্ত নিই,” বলেন মি. ঢাকাল।

মাউন্ট এভারেস্ট মাপা হয় কীভাবে?
সাধারণত সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় মানকে ভিত্তি হিসাবে ধরে পাহাড়ের উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। কাজেই পাহাড়ের নিচের অংশ সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে কতটা উঁচু, তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে পাহাড়ের শিখরটা কত উঁচু।

নেপাল বঙ্গোপসাগরকে তাদের সমুদ্র-পৃষ্ঠের মাপ হিসাবে ব্যবহার করে। ভারত যখন নেপালের হয়ে এভারেস্ট শিখরের উচ্চতা মেপেছে তখন তারা বঙ্গোপসাগর থেকে ভারত-নেপাল সীমান্তের সবচেয়ে কাছের একটি পয়েন্টে জরিপ চালিয়েছে।সেটার ওপর ভিত্তি করে নেপাল ২৫০ কিলোমিটর বিস্তৃত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে উচ্চতা মাপার কাজ করেছে।

অন্যদিকে, চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত চায়না ডেইলির খবর অনুযায়ী তাদের জরিপকারীরা পূর্বাঞ্চলে শানডং প্রদেশে ইয়েলো সি-র সমুদ্র পৃষ্ঠকে ভিত্তি করে পরিমাপ করেছে।
দুই দেশের জরিপকারীরা শিখরের উচ্চতা মাপতে ট্রিগোনোমেট্রির ফর্মূলা ব্যবহার করেছেন।কিন্তু খাতায় কলমে এসব অঙ্ক কষার পরেও পর্বত চূড়ার সঠিক উচ্চতা মাপতে হলে পাহাড়ে ওঠার প্রয়োজন আছে। নেপালীরা এভারেস্ট শৃঙ্গে উঠেছে গত বছর আর চীনা জরিপকারীরা শিখরে পৌঁছেছে এবছরের মে মাসে।

নেপালী কর্মকর্তারা বলছেন তারা খাতায় কলমে তাদের হিসাব কষার জন্যে এভারেস্ট শিখরের ঠিক নিচে বারোটি বিভিন্ন পর্বত চূড়ার হিসাব নিয়েছে, যাতে এভারেস্ট চূড়ার সঠিক উচ্চতার হিসাব যথাসাধ্য নির্ভুলভাবে করা যায়। চীনও একই পদ্ধতিতে তাদের জরিপ চালিয়েছে বলে চীনের সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে।দুটি দেশই গ্লোবাল ন্যাভিগেশনের জন্য একই উপগ্রহ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজে।
এর আগে চীন দুবার এভারেস্টের উচ্চতার পরিমাপ করেছিল, ১৯৭৫ এবং ২০০৫ সালে।

দ্বিতীয়বার জরিপের সময় চীন তাদের নিজস্ব জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল বলে হিমালয় পর্বতের তথ্য বিভাগ জানিয়েছে।এবারও চীন তাদের নিজস্ব জিপিএস ব্যবহার করেছে যেটি ধারণা করা হয় আমেরিকান জিপিএস-র প্রতিদ্বন্দ্বী পদ্ধতি।মি. ঢাকাল বলেছেন আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত পদ্ধতি ব্যবহার করে বিশ্লেষণের মাধ্যমে নতুন উচ্চতার পরিমাপের বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *