নভেম্বর ১৫, ২০২০
৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ওয়াকিটকি নিয়ে বিভ্রান্তিতে মানুষ হাবভাবে মনে হয় গোয়েন্দা পুলিশ!

খবর ডেক্সঃ-
হাতে হাতে কালো রঙের ওয়াকিটকি বা বেতারযন্ত্র। নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী থেকে শুরু করে দোকান ও বাস কাউন্টারের কর্মচারীদের হাতে শোভা পাচ্ছে ওয়াকিটকি। দেখে বোঝার উপায় নেই, কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আর কেইবা অপরাধী। এটি শুধু বিভাগীয় শহর সিলেটে নয়, সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে কালো রঙের এই ওয়াকিটকি হাতে কিংবা কোমরে গুঁজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাস কাউন্টারের শ্রমিক, বেসরকারী নিরাপত্তাকর্মী, শপিং সেন্টার সিকিউরিটি গার্ড, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মচারী ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্মীরাও। এছাড়া বড় জমায়েতে সাউন্ড সিস্টেম কর্মীর হাতেও দেখা যায় আন্তঃযোগাযোগের এই বেতারযন্ত্র।

অবৈধ পথে এসব ওয়াকিটকি আমদানি হওয়ায় তা বিভিন্ন মার্কেট ও খোলা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানিরা নিয়মের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফলে লাইসেন্স না নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ওয়াকিটকির ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ চরম বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিনিয়ত হচ্ছেন প্রতারিত।
বিটিআরসি সুত্রে জানা গেছে, কোনো ব্যক্তিকে ওয়াকিটকি ব্যবহারের লাইসেন্স দেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানকে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়। সরকারী সংস্থার বাইরে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে ওয়াকিটকি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। আর কালো রঙের ওয়াকিটকি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা বা সরকারী সংস্থাই কেবল ব্যবহার করতে পারে।

সূত্র মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা সরকারী সংস্থার সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগে জন্য দ্বিমুখী বেতার যন্ত্র ওয়াকিটকি হাতে দেখা যায়। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের হাতে অহরহই চোখে পড়ছে যন্ত্রটি। এই বেতারযন্ত্র ব্যবহারের চেয়ে প্রদর্শনেই এরা ব্যস্ত থাকে বেশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের সম্মান, দুর্বলতা বা ভয়ভীতি রয়েছে, সেসব সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ওয়াকিটকিধারী পেশাদার অপরাধীরা। ওয়াকিটকি হাতে থাকা ব্যক্তিদের আচরণে ভড়কে যান সাধারণ মানুষও। কারণ তাদের হাবভাবে মনে হয়, তারা যেন পুলিশ বা গোয়েন্দা কর্মকর্তা! আইনের তোয়াক্কা না করেই প্রতারণার ফাঁদ পাতায় ব্যবহৃত হচ্ছে এ যন্ত্রটি। এছাড়া কোরবানী ঈদের আগে পশুরহাটের ইজারাদারের লোকজনের হাতেও মেলে এমন ওয়াকিটকি। তারা ব্যবহারের চেয়ে তা হাতে, আবার কখনও কোমরে গুঁজে রাখেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতো।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১-এর ৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া দেশের ভূখণ্ড, সমুদ্রসীমা বা আকাশসীমায় বেতারযন্ত্র স্থাপন, পরিচালনা বা ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং নজরদারির অভাবে সিলেটে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে রেডিও ওয়েভ ওয়াকিটকির অবৈধ ব্যবহার। আইনটির ৫ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশ, বাংলাদেশ রাইফেলস, কোস্টগার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহ এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজনে বেতার যন্ত্রপাতি স্থাপন, পরিচালনা বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৫৫ (১) ধারা প্রযোজ্য হবে না।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলছেন, মোবাইল ফোনের উন্নত প্রযুক্তির এই সময়েও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় কালো রঙের ওয়াকিটকি হাতে লোকজনকে চলাফেরা করতে দেখা যায়। ওয়াকিটকি হাতে রাখা ব্যক্তিদের ভাবসাব দেখে সাধারণ মানুষও ঘাবড়ে যান। তারা ভাবতে থাকেন সাদা পোশাকে থাকা এই ব্যক্তিরা হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। অনেক সময় আমরাও তাদেরকে চিনতে পারি না। মনে করি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সংস্থার কিংবা থানা পুলিশ। এভাবে অনেক প্রতারকও নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছে।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ জালালাবাদকে বলেন, বিটিআরসি’র অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানই কেবল এই কালো রঙের ওয়াকিটকি আমদানি করতে পারে। কিন্তু অবৈধ পথে এসব ওয়াকিটকি আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে।
নিশারুল আরিফ আরো বলেন, সরকারী সংস্থার বাইরে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে ওয়াকিটকি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া আমারও এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেব।

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *