খবর ডেক্সঃ- সিলেট বিভাগের চার জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা এবং রবি মৌসুমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেড় লাখ প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। কৃষি বিভাগ ঘোষিত প্রণোদনা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সার ও বীজ সহায়তা দেয়া হবে।
কয়েক দফা বন্যায় এবার আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনার কারণেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা। তাই আসন্ন রবি মৌসুমে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় এবং কৃষকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে চাষাবাদ চালিয়ে যেতে পারেন এজন্য কৃষি বিভাগ প্রণোদনা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচির এ উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মজুমদার মো. ইলিয়াস জানিয়েছেন, গত মৌসুমে বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে সিলেটের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বীজ ও সার সহায়তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার কয়েক দফায় প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তবে একজন কৃষক যেকোনো কর্মসূচির শুধু একবার সহায়তা পাবেন। কেউ যেন একাধিক অথবা অকৃষক যাতে সরকারি সহায়তা না পায় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
কৃষি অফিস জানায়, প্রথম দফায় প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সিলেট অঞ্চলে ৩০ হাজার ৪০০ কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। চার জেলায় ২ কোটি ৮৮ লাখ ৬ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সার ও বীজ সহায়তা পাবেন কৃষকরা। পৃথক কর্মসূচিতে এক লাখ ২০ হাজার কৃষককে দেয়া হচ্ছে দুই কেজি করে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ সহায়তা। প্রথম দফার সার ও বীজ সহায়তার মধ্যে সিলেট অঞ্চলের মধ্যে সিলেট জেলায় প্রণোদনা পাচ্ছেন ৬ হাজার ৭০০ জন, মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৭০০, হবিগঞ্জে ৯০০ জন এবং সুনামগঞ্জ জেলায় পাবেন ১০ হাজার ১০০ জন কৃষক।
আঞ্চলিক কৃষি অফিস আরও জানায়, রবি মৌসুমে বোরো উৎপাদনের জন্য ১৫ হাজার ৭০০ কৃষক পাচ্ছেন প্রণোদনা। প্রত্যেকে এক বিঘা জমি চাষাবাদের সমপরিমাণ বীজ পাচ্ছেন। সাতশ কৃষক পাচ্ছেন ২০ কেজি করে গমের বীজ। ভুট্টা বীজ পাচ্ছেন দুই হাজার কৃষক। প্রত্যেকের জন্য ৩ কেজি করে ভুট্টার বীজ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ১ কেজি করে সরিষা বীজ পাচ্ছেন চার হাজার কৃষক। ১ কেজি করে সূর্যমুখীর বীজ পাচ্ছেন ৭ হাজার কৃষক। ১০ কেজি করে চিনাবাদাম পাচ্ছেন ৬০০ কৃষক।
গ্রীষ্ককালীন মুগডাল ৫ কেজি করে ১০০ কৃষককে পরবর্তীতে বীজ সহায়তা দেয়া হবে। বীজ সহায়তার পাশাপাশি ৫ কেজি ও ১০ কেজি হারে ডিএপি ও এমওপি সার সহায়তা দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। তবে গম, সূর্যমুখী ও চিনাবাদামের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বীজ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপপরিচালক মজমুদার মো. ইলিয়াস জানান, ক্ষতিগ্রস্ত আরও এক লাখ ২০ হাজার কৃষকের জন্য হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে দুই কেজি করে হাইব্রিড বীজ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮৬ শতাংশ প্রণোদনা বীজ কৃষকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচি সিলেট অঞ্চলের সিলেট জেলায় ২৫ হাজার কৃষক, মৌলভীবাজার জেলায় ২৫ হাজার কৃষক, হবিগঞ্জ জেলায় ৩৫ হাজার কৃষক এবং সুনামগঞ্জ জেলায় ৩৫ হাজার কৃষক বীজ সহায়তা পাচ্ছেন।
সিলেটের বালাগঞ্জের কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া জানান, তার দায়িত্বপ্রাপ্ত বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলায় পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত যথাক্রমে ১ হাজার ৩৫০ ও ১ হাজার ৪৫০ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মধ্যে সার ও বীজ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ পাচ্ছেন বালাগঞ্জে ১ হাজার ৮০১ জন ও ওসমানীনগরে ১ হাজার ৬৯৫ জন কৃষক।