খবর ডেক্সঃ- মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এই ঢেউ এর মধ্যে নতুন ঢেউ যুক্ত হয়েছে আর সেটি হলো নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিন যাবত সিলেটের নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিয়ে বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। বিষয়টি জনপ্রতিনিধির মতো নির্বাচিত না হলেও অনেকে লবিং করছেন জনপ্রতিনিধির মতোই। আর যারা লবিং করছেন তাদের মধ্য একজন সাবেক আমলা ছাড়াও সিলেটের আরও চারজন আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছে। আর তাদের মধ্যে একজনই হবেন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিউক) চেয়ারম্যান। তবে কে হচ্ছেন সিউক ইতিহাসের প্রথম অভিভাবক? আর কাদেরকে নগরীর উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান চাচ্ছেন নগরবাসী? শীতের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চায়ের কাপে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। নানান আলাচনা সমালোচনার মাঝে সফলতা ব্যর্থতার বিচার বিশ্লেষনেরও কমতি নেই।
এই যখন প্রসঙ্গ। তখন সিলেটে পরিকল্পিত নগর ও নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিত করতে দেশের ৭ম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আরেকটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ। এছাড়া সিউক আইনের খসড়া মন্ত্রীসভায় উত্থাপন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে ইতিহাসের পাতায় প্রথম নগর উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য সিলেটের একাধিক হেভিওয়েট নেতা স্বপ্ন দেখছেন ।
এ পর্যন্ত এ পদে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। এছাড়া সিউক চেয়ারম্যানের দৌড়ে রয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উ্িদ্দন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জ্যেষ্ঠ ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু।
সুত্র জানায়, তারা সকলেই স্ব-মহিমায় নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন বলে নগর উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হতে চান। তবে আসাদ অনুসারীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, গেল সিটি নির্বাচনে আসাদ উদ্দিন আহমদ নৌকা প্রতীকে মেয়র নির্বাচন খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে মেয়র পদে দাঁড়াননি তিনি। পক্ষান্তরে সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে টিকেট দিয়েছিলেন। সেজন্য এদের মধ্যে অন্যতম হলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। এমনটিই বলেছেন তার অনুসারীরা।
তবে আসাদ উদ্দিন আহমদ কতটি প্রস্তুত রয়েছেন, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিলেট মহানগর আমার প্রাণের জায়গা। দল করি আওয়ামী লীগ। তাই নগরীর উন্নয়নের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলে দেশের সকল জায়গায় উন্নয়ন হচ্ছে নগরীর অলিতে গলিতে। এজন্য পরিকল্পিত উন্নয়নের বিকল্প নাই। এক প্রশ্নের জবাবে ক্লিন ইমেজের এ নেতা জানান, করোনা মহামারিতে ও মানুষের পাশে যেমন ছিলেন, তেমনি আগামিতে তিনি মানুষের সাথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দাবিদার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি তো আরাম আয়েশের দিন বাদ দিয়ে লন্ডন থেকে দেশে এসেছি জনগণের খেদমত করার জন্য। একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সংসদ সদস্য হয়েছিলাম। পরবর্তীতে গরীব দু:খী মেহনতি মানুষের পাশে ছিলাম এবং আছি। দল আওয়ামী লীগ করি বলে বারবার সিলেট দুই আসনের সংসদীয় আসনটি ছেড়ে দিয়েছি আমার প্রিয় নেত্রীর কথায় ও দলের সুবিধার জন্য। আমার কোনো আক্ষেপ নেই! তবে আক্ষেপ থাকবে, যদি দল আমাকে কোনো কাজে না লাগায়? দল যে জায়গায় কাজে লাগাবে সেই জায়গায় আমি আছি। তবে আমাকে সিউক চেয়ারম্যান করা হলে আমি আমার জাতীয় সংসদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবো।
এই দুই নেতার সাথে আলোচনায় আছেন আরেক জনপ্রিয় নেতা বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উ্িদ্দন সিরাজ। তিনি বলেন, ভাইরে রাজনীতি বড় কঠিন। অনেক জেল জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আজকের মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ হয়েছি। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন এখনো পাশ হয়নি, খসরা হয়েছে। এ আইন পাশ হতে সময় লাগবে। আমার চিন্তা চেতনায় জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়ন করা। আমার দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে স্থানে আমাকে রাখবেন সে স্থানে আমি বসতে রাজি।
নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আলোচনার মাঠে আরেক উদিয়মান তরুণ রাজনীতিবিদ নেতার নাম নগরজুড়ে আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি হলেন, সিসিকের প্রথম মেয়র প্রয়াত জননেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের তনয় ডা. আরমান আহমদ শিপলু। যিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অনুসারীরা বলছেন, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন নগরবাসীর আপনজন। সে হিসেবে তার ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর অভিভাবক হিসেবে তাকে দায়িত্ব দিলে নগরবাসীর জন্য সুখকর হবে।
এ ব্যাপারে ডা. আরমান আহমদ শিপলু বলেন, উদ্যোগটি সময় উপযোগি। আমি ধন্যবাদ জানাই জননত্রেী শেখ হাসনিাকে ও আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এরকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একজন আদর্শর সৈনিক ও জননত্রেী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ‘সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। তার একজন ছেলে আমি। সবার কাছে আমি দোয়া চাই। বাবাকে নগরীর সর্বস্তরের জনসাধারণ আপনজন হিসেবে কাছে পেতেন। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমাদের রাজনীতি হচ্ছে গনমানুষের জন্য, এলাকার উন্নয়নের জন্য। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের অভিভাবক, আমাদের আশা ভরসার আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবেন দলের কর্মী হিসেবে আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব।
গত ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার ‘সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০২০’ এর খসড়া আইন বিষয়ে সিলেট অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গত মঙ্গলবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে সিলেটের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে কে হচ্ছেন সিউকের প্রথম কান্ডারি তা নিয়ে চলেছে আলোচনা। রাজনৈতিক নিয়োগ না কী মন্ত্রনালয় থেকে সরকারিভাবে কোনো আমলাকে নিয়োগ দেয়া হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে যদি রাজনৈতিক নিয়োগ হয় তাহলে সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিলেটের কয়েকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতাদের থেকে যে কোনো একজনকে সেই চেয়ারে বসাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।