অক্টোবর ৮, ২০২০
৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

খালাস চেয়ে মিন্নির ২১ যুক্তি

খবর ডেস্কঃ- আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন জানিয়েছেন। তার আবেদনে বিচারিক আদালতের রায়টি অনুমান নির্ভর ও বাতিলযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি মামলার বিচার ও সাজা প্রদানের প্রক্রিয়া নিয়েও আপিল আবেদনে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালের ২৬ জুন। সেদিন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ডের গড়া কিশোর গ্যাং বন্ড গ্রুপ। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপর একই বছরের ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ক্রসফায়ারে নিহত হন। পরে রিফাত হত্যা মামলায় প্রধান সাক্ষী থেকে মিন্নিকে আসামি দেখানো হয়। ওই মামলায় মিন্নি হাইকোর্ট থেকে জামিনে থাকলেও বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে খালাস প্রদানের রায় ঘোষণা করেন আদালত। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। এরপর মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) খালাস চেয়ে মিন্নির হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন।

মামলার আপিল আবেদন প্রসঙ্গে মিন্নির অন্যতম আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ফাইলিং আইনজীবী হিসেবে এই মামলায় আপিল আবেদন দাখিল করেছি। আপিল আবেদনটি মোট ৪৫১ পৃষ্ঠার। আমরা আবেদনে বিচারিক আদালতের রায়ের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেছি। এছাড়াও মামলা খালাসের পক্ষে সর্বমোট ২১টি যুক্তি উপস্থাপন করেছি।

আপিল আবেদনের যুক্তিগুলো হলো :

১. প্রাথমিকভাবে আপিলকারী (মিন্নি) এই মামলায় সাক্ষী ছিল। পরে তাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। তাকে পাঁচদিন পুলিশ রিমান্ডে রাখা হয়েছিলো। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রিমান্ডের মধ্যবর্তী সময়ে ফিল্মি স্টাইলে আইন বহির্ভূতভাবে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করে। যার কারণে ওই রায়টি বাতিলযোগ্য।

২. গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার দায়রা আদালতে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে তা আইন, ঘটনা এবং পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় একটি খারাপ নজির তৈরি করেছে।

৩. মামলার চার্জশিটে ৭৫জন সাক্ষী রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে ৭, ১৩, ১৪ এবং ১৭ নাম্বার সাক্ষী নিজেদের চাক্ষুষ সাক্ষী দাবি করা সত্ত্বেও তাদের তথ্য-প্রমাণ ছিল পক্ষপাতদুষ্ট। তাই ওই রায়টি বাতিলযোগ্য।

৪. সাজাপ্রাপ্ত আপিলকারী (মিন্নি) এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে অপরাধী হিসেবে সাজা প্রদান করে রায় ঘোষণা করায় তা বাতিলযোগ্য।

৫.মিন্নির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আমলে না নিয়েই বরগুনার দায়রা জজ আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। যা তাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

৬. মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অস্বচ্ছতার সঙ্গে এ মামলার তদন্ত করেন এবং কোনরকম আইনি ভিত্তি ছাড়াও মামলার চার্জশিট দাখিল করেন, যা মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়।

৭. মামলা দায়েরের সময় বাদী (রিফাতের বাবা) জানায়, ঘটনাস্থল থেকে মিন্নি রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে রিকশাযোগে এনে ভর্তি করে এবং মিন্নিকে একমাত্র সাক্ষী করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মামলার তদন্ত শেষে মিন্নিকে আসামী করে দণ্ড দেওয়া হয়, এতে করে মিন্নি পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

৮. আইনের সঠিক অনুসরণের অভাবে এ মামলায় মিন্নি নিজেকে রক্ষায় উপযুক্ত সুযোগ পায়নি।

৯. আদালত (বরগুনার) সন্দেহপূর্ণ, মৌখিক সাক্ষ্য এবং ধারণা নির্ভর অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় এ রায় দিয়েছেন, যা বাতিলযোগ্য।

১০. ওই ঘটনায় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট দেখা গেছে যে, সে বারবার তার স্বামী রিফাতকে আক্রমণকারীদের থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আদালত তার রায়ে মিন্নি রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি বলে উল্লেখ করেছে। অথচ এসব স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আদালত আবেগপ্রবণ হয়ে মিন্নিকে সাজাপ্রদানের রায় ঘোষণা করেছেন। তাই এ রায় বাতিলযোগ্য।

১১. মিন্নিকে সাজাপ্রদানের ঘটনা অনুমান ও ধারণা নির্ভর। এ মামলায় সাক্ষীদের জেরাও বিবেচনা করা হয়নি। ফলে মিন্নিকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সাজা সংক্রান্ত আদালতের রায়টি ভুল সিদ্ধান্ত।

১২. মিন্নির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।

১৩. যেকোনও দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারিক আদালত কর্তৃক মিন্নিকে সাজাপ্রদানের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য না হওয়ায় তার সাজাপ্রদানের রায় বাতিলযোগ্য।

১৪. যে কোনও দৃষ্টিকোণ থেকে এ মামলার ঘটনা, পারিপার্শ্বিকতা, তথ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) সন্দেহাতীতভাবে মামলার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এ মামলায় মিন্নি খালাস পাওয়ার যোগ্য।

১৫. আপিলকারীকে প্রহসনমূলক ও অযৌক্তিকভাবে সাজা প্রদান করা হয়েছে।

১৬. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই মামলায় অতিরঞ্জিত করেছে।

১৭. আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্ত করা ব্যতীত বিচারক এই মামলায় অন্য আর কিছুই বিবেচনা করেননি।

১৮. দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় আপিলকারী এ মামলায় খালাস পাবেন।

১৯. সময়ে সময়ে এ মামলার যুক্ত হওয়া সাক্ষীদের ওপর নির্ভর করে সাজা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেসব সাক্ষীরা বিশ্বাসযোগ্য ছিলোনা।

২০. পুলিশের কাছে বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সাক্ষীরা বিভিন্ন বক্তব্য দেওয়ায় সেসব সাক্ষীরা মোটেও নির্ভরযোগ্য ছিলোনা।

২১. অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অনুসরণ করে এ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে। সূত্রঃ সময় নিউজ

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *