গৌতম চন্দ্র বর্মন
এক সময়ের গ্রামের সালিশ ও রাজনীতি মনে এলেই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে সুশীতল ছায়া ঘেরা কোনো দৃশ্যের ছবি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই গ্রামীণ সালিশ ব্যবস্থায়ও ঢুকে পড়েছে স্বার্থপরতা, পক্ষপাতিত্ব ও অবৈধ অর্থনৈতিক লেনদেন।আর গ্রামের ছোট খাট ঝগড়া, বিবাদ পারিবারিক দ্বন্ধের বিষয়গুলো সালিশী বৈঠকে সামাধান করা গেলেও এখন তা সমাধান করা যাচ্ছে না।আর এসব থানা পুলিশ ও আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে।আর এসব হচ্ছে গ্রাম্য মাতব্বদের কারনে,এতে সাধারণ মানুষ চরম ভুগান্তিতে শিকার হচ্ছেন। আগে চুরি ডাকাতি ও জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের মিমাংসা মাতব্বররাই করতেন। কিন্তু এখন সেটি হয়না। প্রতিপক্ষ আগপাছ না ভেবেই থানায় মামলা করে।আস্তাহীনতার কারণে গ্রাম্য সালিশী ব্যবস্হা বিলুপ্তির পথে।
আমাদের গ্রামীণ জনপদে ‘ভিলেজ পলিটিক্স’ নামে একটি কথা প্রচলিত আছে।যারা যারা গ্রামে বসবাস করেন অথবা যাদের জন্ম গ্রামে, কিন্তু এখন শহরে বসবাস করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই এই শব্দটির সাথে পরিচিত। ভিলেজ পলিটিক্সের ফাঁদে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন এমন কি কাউকে কাউকে গ্রাম পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে। যার প্রমাণ অহরহ রয়েছে। এই ভিলেজ পলিটিক্স এর ফাঁদে পরে বহুনারী প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছেন। ভিলেজ পলিটিক্স এর নেপথ্যে সাধারণত গ্রামের কিছু সংখ্যক দুষ্টু লোকেরা থাকেন। তারা এমন লোক যে মারাত্বক অপরাধ করেও ধরাঁছোয়ার বাইরে রইয়ে যান।
তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেনা। প্রতিবাদ করার সাহস ও পাইনা। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকে উল্টো ফাঁদে পড়তে হয়, বিপদে পড়তে হয় প্রতি পদে পদে।যারা এই গ্রাম্য রাজনীতির নায়ক তারা সব সময় সমাজের কাছে ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে চান। অনেক সময় সেই চেষ্টাই তারা সফলও হয়। গ্রামের সকলে তাদের সম্মানের চোখে দেখে। কিন্তু প্রকৃতভাবে ওসব নায়কদের কেউ সম্মানের চোখে দেখেনা। গ্রাম্য রাজনীতিবিদরা নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থের সিদ্ধি লাভ করতে চান। নিজেদের স্বার্থের জন্য তারা সবকিছু করতে পারেন।
এরা যদি দেখেন, গ্রামের কেউ তার চেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছেন বা ধন সম্পদ তার চেয়ে বেশী হয়ে যাচ্ছে তখন তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তাদের প্রতিহত করে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি মুলক মামলা, মুকদ্দমা দিয়ে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়। যেভাবেই হোক তাকে সর্বস্বান্ত করার চেষ্টা করে।গ্রামে আরো একটি প্রবাদ আছে “চোরকে বলে চুরি কর, আর গৃহস্থকে বলে সজাগ থাক”। এটা ভিলেজ পলিটিশিয়ানরাই করে থাকেন। কিন্তু নিরীহ জনগণ এসব ভূগান্তির মুক্তি চাই।অতএব, যে কোন ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব নিজের। কাজেই যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নিজে সতর্ক থেকে অন্যকে সতর্ক করুণ।