নভেম্বর ৯, ২০২০
৭:৩৬ অপরাহ্ণ

চলনবিলে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ ঐতিহ্য যাত্রাপালা মঞ্চস্থ

নাটোর জেলা প্রতিনিধিঃ- নাটোরের গুরুদাসপুরে চলনবিল নাট্যগোষ্টির পরিবেশনায়‘যাত্রা হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার” শ্লোগানে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ ঐতিহ্য যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার খুবজীপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রী কলেজের আব্দুল কুদ্দুস মিলনায়তনে ঐতিহাসিক যাত্রাপালা গরিবের আর্তনাদ মঞ্চস্থ হয়েছে।
যাত্রাপালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন। অন্যদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.মোঃ আমিরুল ইসলাম কনক,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব মোঃ মিজানুর রহমানসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
যাত্রাপালার আয়োজকরা জানান, এক সময় যাত্রাপালা ছিলো গ্রামীণ জনগোষ্টির বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। সস্তা বিনোদন, আকাশ সাংকৃতির প্রভাব,সরকারের অসহযোগীতাসহ নানাবিধ কারনে সে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে নতুন প্রজন্মকে যাত্রা পালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই তাদের ওই আয়োজন বলে জানা গেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, জীবনে বেঁচে থাকতে হলে যেমন আহারের প্রয়োজন আছে ঠিক তেমনি আত্বার খোরাকের জন্য বিনোদনেরও প্রয়োজন আছে। সেই বিনোদনটা যেন হয় দেশীয় এবং ইতিবাচক বিনোদন। আমরা যেন আমাদের যুব সমাজকে অপসংকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। এজন্য বেশী জোর দিতে হবে দেশীয় সাংকৃতির উপর যাতে করে দেশীয় সাংকৃতিও বেঁচে থাকে ওপর দিকে বিদেশী অপসাংকৃতির আগ্রাসন থেকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.মোঃ আমিরুল ইসলাম কনক জানান, মানুষ মৌখিক উপস্থাপনা, অভিনয় ও লেখার মাধ্যমে যাপিত এবং আধ্যাত্মিক জীবনের নিগুঢ় অনুভূতি প্রকাশ করতে চায়। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ অভিনয় করে আসছে। প্রাথমিক পর্যায়ে অভিনয়ের মাধ্যম ছিল যাত্রা। যাত্রার বিষয় ছিল দেব বন্দনা ও ধর্মীয় কাহিনী নিভর। অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে দেবতার প্রতি মানুষের প্রেমভক্তির আধিক্য। মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, শোষণ-শাসন হয়ে উঠে যাত্রার উপজীব্য। যাত্রাপার ইতিহাসও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের মতো বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে আধুনিক কালে এসে উৎকর্ষ অর্জন করেছে। সে ক্ষেত্রে বলা যায় যাত্রা অত্যান্ত প্রাচীন একটি বিনোদন শিল্প মাধ্যম। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে নানা বাঁক পেরিয়ে যাত্রাপালা আধুনিককালে এসে পৌছেছে। এই গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে নতুন প্রজন্মকে হাল ধরতে হবে।
অনুষ্ঠানে মতিউর রহমান রচিত গরিবের আর্তনাদ পালা মঞ্চস্থ হয়। যাত্রাপালাটির পরিচালনায় ছিলেন আছালত কবির। সহায়াতাকারী ছিলেন মোঃ রফিকুল ইসলাম। অভিনয়ে ছিলেন-আছালত কবির,শাহাদৎ হোসেন,বাবু,লুৎফর রহমান,ইমান আলী প্রমুখ। এলাকার বিপুল সংখ্যক উৎসুক দর্শক গভীর রাত পর্যন্ত বিমুগ্ধ নয়নে তা উপভোগ করেন।

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *