অক্টোবর ১০, ২০২০
১:৩৭ অপরাহ্ণ

নওগাঁ-৬ আসনে উপ-নির্বাচন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর শেষ সময়ে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারনা

বিজয়ের অপেক্ষায় "আত্রাই-রাণীনগর"বাসী

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: এই প্রথম উত্তরবঙ্গে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আগামী ১৭অক্টোবর নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। রাতের অন্ধকারে ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। যার যার মতো করে নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের। নতুন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন নিয়ে ভোটারদের মাঝে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে নির্বাচন কমিশন বলছেন ইভিএম বিষয়ে ভোটারদের সঠিক ধারনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ নামে পরিচিত এই আসনে দীর্ঘদিন থেকে নেই কোন হানাহানি। তবে যে প্রার্থী বিজয়ী হোক না কেন শান্তিতে থাকতে চান এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

গত ২৭জুলাই এ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ার পর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এ আসন থেকে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা হলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে মনোনিত প্রার্থী রাণীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন হেলাল, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আত্রাই উপজেলার আলহাজ্ব শেখ মো: রেজাউল ইসলাম এবং ন্যাশনাল পিপলস পাটির ইন্তেখাব আলম রুবেল। উপ-নির্বাচনকে ঘিরে এই দুই উপজেলার সর্বত্র পোষ্টার সাটানো হয়েছে। চলছে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারনা। শহর থেকে পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। এ আসনের মোট ভোটার ৩লাখ ৬হাজার ৭২৫জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৫৩হাজার ৭৫৮জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৭ জন। রাণীনগর উপজেলায় ভোট কেন্দ্র ৪৯টি এবং আত্রাই উপজেলায় ভোট কেন্দ্র ৫৫টি।

বিএনপি শাসন আমলে সর্বহারা নামক সন্ত্রাসী দলের আর্বিভাব ঘটে। তাদের নিধন করার লক্ষ্যে ২০০১সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে জামায়াতে মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) উত্থান ঘটে। জেএমবি দখল করে জেলার আত্রাই, রাণীনগর, নাটোরের বাগামারা এবং রাজশাহীর একাংশ। জঙ্গী এলাকা হিসেবে এক সময় এ দুই উপজেলা পরিচিত ছিল। আতঙ্কের অপর নাম বাংলা ভাইয়ের অধ্যুষিত এলাকা। যার নেতৃত্বে ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাই। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হতো।

প্রকাশ্যে দিবালোকে সর্বহারা-জঙ্গী নিধনের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা রাখা হতো। কুপিয়ে খন্ড খন্ড করে লাশ মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে রাখার মতো বিভীষিকাময় ও লোমহর্ষক ঘটনা হয়ে থাকত। ভয়ে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকত এ দুই উপজেলার মানুষ। সন্ধ্যার পর ভয়ে কেউ বাহিরে বের হতো না। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী লাভ করেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামীলীগ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলা ভাইকে দমন করেন। এরপর থেকে এ দুই উপজেলায় শান্তির সুবাতাস বইতে থাকে।

আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, আমি দুই উপজেলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি মানুষ। আওয়ামীলীগের দু:সময়ে আমার পরিবার ছিলো বাতিঘর। আওয়ামীলীগ করতে গিয়ে আমার এক ভাইকে সর্বহারা দিনে-দুপুরে জবাই করে হত্যা করেছে। আমিও বিগত সময় অনেক নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হয়েছি। উপ-নির্বাচনে ৩৪জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার লক্ষে নেতাকর্মীরা উৎসাহ ও আনন্দে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে আসছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে এলাকার উন্নয়নে মাদক, বাল্যবিবাহ বন্ধসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে এলাকাবাসীর পাশে থাকবো। শান্তিতে ঘুমাতে চাইলে নৌকা মার্কার কোন বিকল্প নেই। আশা করছি এলাকার উন্নয়নে যেসব কাজ অসমাপ্ত রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে ও শান্তির সুবাতাস ধরে রাখতে এলাকাবাসী নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।

নওগাঁ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহনের জন্য ভোট গ্রহনকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়া ভোটারদের ইভিএম ব্যবহার হাতে-কলমে শিখিয়ে দেয়া হবে যাতে ভোট দিতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়। ভোটের আচরন বিধি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও কোন সত্যতা মিলেনি। আর কয়েকটি অভিযোগ প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে।

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *