বালাগাল উলা বি কামা–লি হি, কাশাফাদ দুজা বি জামা-লি হি; হাছুনাত জামিউ খিছ-লি হি, সাল্লু আলাইহি ওয়া আ-লি হি। ‘সবার ওপরে আসন যাঁর, তাঁর রূপের ঝলকে কেটেছে আঁধার; সকল কিছুই সুন্দর তাঁর; দরুদ তাঁকে ও তাঁর পরিবার।’
বিশ্বের বিস্ময়, নবী ও রাসুলগণের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ, বিশ্বনবী হজরত আহমাদ মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)। যাঁর গুণকীর্তনে ভিন্ন ধর্মের মানুষেরা পর্যন্ত পঞ্চমুখ; কাফির–মুশরিক, জানের দুশমনরাও যাঁকে ‘আল আমিন’ তথা মহাসত্যবাদী বা পরম বিশ্বাসী আখ্যায় আখ্যায়িত করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি; যাঁর আবির্ভাবে কিসরা ও কাইজারের গগনচুম্বী রাজপ্রাসাদ ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে; পারস্যের অনির্বাণ অগ্নিকুল চিরনির্বাপিত হয়; তাঁর সেই শুভাগমনকে বিশ্ববিবেক ক্ষণিকের তরেও ভুলতে পারে না।
বছরের ৩৬৫ দিনও যদি তাঁর পবিত্র মহামিলাদ বা জন্ম স্মরণ করা হয়, তথাপি রোজ কিয়ামত পর্যন্ত এর প্রয়োজন ও গুরুত্ব বিন্দুমাত্র হ্রাস পাবে না। তাই তো সারা দুনিয়া প্রতিমুহূর্তে গাইছে: ‘সাল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা’।
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (সা:) সংক্ষেপে মুহাম্মদ (সা:) ইসলাম ধর্মের প্রচারক। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী তিনি আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং তার উপরই কুরআন প্রেরিত হয়েছিল।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর জন্ম ৫৭০ খ্রীস্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে। জন্মের পূর্বেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর পিতা আব্দুল্লাহ মা’রা যান। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর মায়ের নাম আমিনা। তিনি শৈশবে আল-আমিন (বিশ্বস্ত) উপাধি লাভ করেন।
৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে মুহাম্মদ (সা.) হেরা গুহায় নবুয়ত লাভ করেন। আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিবরাঈল (আ.) মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে আল কুরআনের ৫ টি আয়াত নিয়ে আসেন। আয়াতগুলো ছিল কুরআনের ৯৬তম সূরা আল-আলাক- এর।
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবী এমন সভ্য, সুন্দর ছিল না। ছিল জাহি’লিয়াতে ঢাকা। কারণ মানুষ তখন ভুলে গিয়েছিল নিজেদের পরিচয়। ভুলে গিয়েছিল তারা মানুষ। ফলে প’শুত্বের চেয়েও নিকৃ’ষ্ট হয়ে উঠেছিল তাদের মন। তারা এতটাই অমা’নবিক ছিল, নিজের ঔর’সজাত সন্তানকেও জী’বন্ত মাটিতে পুঁ’তে ফেলত। হা’নাহা’নি, মা’রামা’রি, র’ক্তার’ক্তি, কাফেলা লু’ট, নারী নির্যা’তনসহ এমন কোনো মন্দ কাজ নেই, যা তারা করত না।
এমনই এক অন্ধকারাচ্ছ’ন্ন সময়ে সমাজব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তনের জন্য সে ছিলেন এক মহামানব যাঁর নাম মুহাম্মদ (সা.)। তিনি এক আশ্চর্যময় পরিবর্তন আনেন সমাজে। ঐশী আলোয় আলোকিত। নূরের চেরাগ জ্বলে। তিনি মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আবদুল্লাহ। আর মাতা আমিনা। বাবা-মাহারা শিশু মুহাম্মদ বড় হতে থাকেন দাদা আবদুল মুত্তালিব এবং চাচা আবু তালিবের আদরে। শৈশবেই তিনি সত্যবাদিতা আর সদাচরণে সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন।
আমানতদারির বিশ্বস্ততায় উপাধি পান ‘আল-আমিন’ তথা বিশ্বাসী। সেই যুগে মানুষ যখন কারণে অকারণে হ’ত্যা, লু’টতরা’জ, ম’দ্যপান, জো’য়া, নারী নি’র্যাতন হী’ন কর্মকাণ্ডে উন্মাদ হয়ে থাকত, তখন যুবক মুহাম্মদ (সা.) চিন্তামগ্ন থাকতেন মানবতার মুক্তির। কীভাবে এ বর্বরো’চিত সমাজের পরিবর্তন হবে, মানুষ সত্যিকারের মানুষে পরিণত হবে এ ধ্যানেই মগ্ন থাকতেন দিন-রাত। চল্লিশ বছর বয়সে হলেন নবী ও রাসূল। প্রভুর ঐশী বাণীকে মানুষের কাছে তুলে ধরলেন।
দয়ার সাগর নবীজি অবিশ্বাসীদের বিদ্রুপ, অমানুষিক নি’র্যাতনে ক্ষু’ব্ধ’ না হয়ে তাদের প্রতি দয়া দেখিয়ে করুণাময় রবের কাছে তাদেরই জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাদের ভালোবাসা দিয়ে সত্যের পথে ডেকেছেন। কারণ তিনি যে দয়ার নবী আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এসেছে তোমাদের মধ্যকার এমন একজন রাসূল, তোমাদের দুঃখ যার কাছে দুঃসহ। তিনি তোমাদের হিতাকাক্সক্ষী, বিশ্বাসীদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।’ (সূরা তাওবা : ১২৮)।
নবীজির এ দয়া নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সব মানুষের জন্যই সমানভাবে ছিল। হোক সে ভিন্ন মতের বা পথের। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পাশ দিয়ে একবার এক লা’শ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তখন তা দেখে দাঁড়ালেন, উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তখন বললেন, এ তো ইহুদির লা’শ। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, আলাইসাত নাফসা? অর্থাৎ সে কি মানুষ নয়? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩১২)।
নবীজির দয়ামায়া শুধু মানব জাতিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাকহীন পশু-পাখির জন্যও ছিল তার দয়ামায়া। তাদের জন্যও নবীজির মমতা ছিল মানুষের মতোই। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় একটু প্রয়োজনে দূরে গেলাম। দেখলাম একটি লাল পাখি, সঙ্গে দুটি বাচ্চা। আমরা বাচ্চা দুটি ধরে নিয়ে এলাম।
কিন্তু মা-পাখিটিও চলে এলো। বাচ্চা দুটির কাছে আসার জন্য পাখিটি মাটির কাছে অবিরাম উড়ছিল। ত