আব্দুল করিম চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
আগস্ট ২, ২০২১
৬:৪৫ অপরাহ্ণ
ভ্যানগাড়ির পানিতেই চলে জীবন

ভ্যানগাড়ির পানিতেই চলে জীবন

চট্রগ্রাম নগরীর হালিশহর আদর্শ পাড়া এলাকায় দুই যুগ আগে গৃহবধূ হয়ে এসেছিলেন জোবেদা বেগম মুক্তা। বিয়ের পর থেকে দেখে আসছেন পানির সংকট। দীর্ঘদিন ধরে ডিপ টিউবওয়েলের পানি ব্যবহারে চল্লিশের আগেই ঝরে পড়তে শুরু করেছে চুল। পানির অতিরিক্ত আয়রনে দ্রুত সময়ে নষ্ট হয়ে যায় পরিবারের ব্যবহৃত পোশাক ও রান্নার জিনিসপত্র। আধুনিক বন্দর নগরীর অংশ হলেও হালিশহরে বছরের পর বছর পানি সংকটে মানুষ। বর্ষাকালে পানিতে যখন পুরো নগরী থৈ থৈ করছে, ঠিক সে সময়েও লাইন ধরে পানি কিনছেন এখানকার বাসিন্দারা।
যুগ যুগ ধরে পানি সংকটে নগরীর হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা। একসময় পানির জন্য পুকুর ও সাধারণ নলকূপেই ভরসা ছিল এ এলাকার বাসিন্দাদের। অতিরিক্ত নগরায়নের প্রভাবে হারিয়ে গেছে অনেক পুকুর। অবিশিষ্ট যা আছে তাতে কিছু মানুষের গোসল ও ধোয়ামোছার কাজ চলে। ভূ-গর্ভে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সাধারণ নলকূপে এখন আর পানি পাওয়া যায় না। বিভিন্ন স্থানে গভীর নলকূপে পানি তোলা হলেও তা ব্যবহার অযোগ্য। মাত্রাতিরিক্ত লবণ ও আয়রনে ভরপুর। কেনা পানি দিয়েই নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষকে। হালিশহর হিন্দু পাড়া এলাকার চাকুরীজীবী জয়দেব বলেন, কেনা পানি দিয়েই বেঁচে আছে এখানকার মানুষ। প্রতিদিন ভ্যান গাড়ি থেকে ড্রাম ভর্তি পানি কিনে নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। কোন কারণে পানি কিনতে না পারলে চরম সমস্যায় পড়তে হয়।হালিশহর মুন্সিপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বাবর বলেন, এলাকায় সামান্য কিছু স্থানে ওয়াসার সংযোগ রয়েছে। বাকিদের গভীর নলকূপ বা পুকুর-জলাশয়ের পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। পুকুর পানিতে গোসল, ধোয়া-মোছাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে হয়। আর খাবার পানি ভ্যানগাড়ি থেকে কিনে খেতে হয়। তিনি বলেন, সাধারণ নলকূপে পানি ওঠে না। অকেজো হয়ে গেছে। সামর্থবানরা গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করলেও এর বেশিরভাগ লবণাক্ত, আয়রনমিশ্রিত ও ঘোলাটে।৩৭ নং উত্তর মধ্যম হালিশহরের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আবদুল মান্নান পূর্বকোণকে বলেন, বন্দর নগরীর অংশ হয়েও হালিশহরের মানুষ এখনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে পানি সংকটের যেন কোন সুরাহা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন নলকূপের লবণ ও আয়রন মিশ্রিত পানি ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ।হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকার মানুষের এ দুর্ভোগ দূর করতে পারে একমাত্র ওয়াসা। দীর্ঘদিনের এ দুর্ভোগ মেটাতে বেশকিছু স্থানে ওয়াসার প্রধান সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় দু’বছর আগে এসব লাইন স্থাপন করা হলেও আর কোন কাজ এগোয়নি। দেয়া হয়নি নতুন কোন কোন সংযোগ। ফলে দুর্ভোগও কাটছে না সাধারণ মানুষের।

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *