অক্টোবর ১৭, ২০২০
১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

মহিপুর ইউপি নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রই ঝূঁকিপূর্ণ; ভোটারদের ভয়ভীতি দেয়ার অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর

এইস এম রাকিবুল ইসলাম হৃদয়,
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ- মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে মহিপুর থানার ওসি মো: মনিরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করে নিতে ইসি’র কাছে লিখিত অভিযোগ করার পরও অদ্যবধি তাকে প্রত্যাহার করা হয়নি। নির্বাচনে তার পক্ষপাতমূলক আচরন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্ত:রায় হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া আ’লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল মালেক আকন্দ এবং তাঁর সমর্থকরা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের দিন কেন্দ্রে না আসার জন্য হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। এতে মহিপুর ইউনিয়নের সাধারণ ভোটার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।’
শুক্রবার (১৬অক্টোবর) বেলা ১১ টায় কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনাতনে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফজলু গাজী সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট শাহজাহান পারভেজ, নান্নু মুন্সী, প্রার্থীর বড় ভাই মো. নাজমুল আহসান, ছোট ভাই মো. মজনু গাজী প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ’মহিপুর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান আ: মালেক আকন্দ’র ছেলের শশুর বাড়ির আত্মীয়। তাই আমার প্রচার কর্মীদের মারধর এবং হয়রানীর অভিযোগ থানায় জানালেও কোনো প্রতিকার পাইনা। বৃহস্পতিবার (১৫অক্টোবর) মহিপুর বাজার এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আমার মেয়ে নুরে জান্নাত সুমি ভোট চাইতে গেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ছেলে সোহাগ আকন আমার মেয়েকে জোড় পূর্বক সে এলাকা থেকে বের করে দেয়। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আমার কর্মীদের ওপর হুমকি, ধামকি ও হয়রানীর মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া অনিয়ম নিয়ে ওসি ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে আরও ৮-১০টি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অদ্যবধি কোনোটিরই প্রতিকার পাইনি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে দ্রুত ওসিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। মহিপুর থানার ওসিকে প্রত্যাহার করার জন্য গত ৮ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলু গাজী বলেন।’
ফজলু গাজী আরও বলেন, ’২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ভোটকে প্রভাবিত করতে কলাপাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দু’মেয়র ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় নৌকার সমর্থনে ভোট চাইতে গিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে ভোট কেন্দ্র দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। এতে আমি শঙ্কিত আদৌ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হবে কীনা? তারা নয়টি কেন্দ্রের মধ্যে নিজ শিববাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোয়াজ্জেমপুর সিনিয়র মাদ্রাসা, নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুধিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নজিবপুর সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্রটি ভোটের দিন দখল করে নিতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের জড়ো করেছেন। তাই প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করার দাবি জানান তিনি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে মহিপুর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এখানে আমার কেউ আত্মীয় নয়, পরও নয়। আমার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী যতগুলো অভিযোগ দিয়েছে, তার কোনোটিরই সত্যতা পাইনি। তা ছাড়া আমার ব্যাপারে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে, তদন্তে যদি তা সত্য প্রমানিত হয় তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল মালেক আকন্দ বলেন, ‘আমি কোনো বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করিনি। বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী তালতলী-বরগুনা থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে জড়ো করেছেন। আমার কর্মী-সমর্থকদের হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকী দেয়া হচ্ছে। আমিও চাই একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’
মহিপুর ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের কাছেও দু’দিন আগে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী একটি অভিযোগ দিয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রকেই আমরা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেভাবেই প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে। নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু করার জন্য র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সহ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যামান আদালত দায়িত্ব পালন করবেন।’

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *