জানুয়ারি ১৯, ২০২১
৫:০৫ অপরাহ্ণ

রাজধানীতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর স্মরনসভা

খবর ডেক্সঃ- রাজধানীর মগবাজারে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দিলুরোড মাদরাসার উদ্দ্যোগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা থেকে রাত ১১.৩০ পর্যন্ত কাসেমীর স্মরনসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

নূর হোসাইন কাসেমী একজন আদর্শ শিক্ষক, শাইখুল হাদিস,রাজনিতীবিদ,অাধ্যাতিক রাহবার,ইসলাম ধর্ম ও জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে ছিলেন প্রতিবাদী কন্ঠ।
তিনি জীবদ্দশায় এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস রচনা করে গিয়েছেন।
তার বর্ণাঢ্য জীবনী নিয়েই আজকের আলোচনা।
নূর হোসাইন কাসেমী ১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত তিনি নিজ গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর ভর্তি হন পাশের গ্রামের কাশিমপুর মাদরাসায়। এখানে পড়েন মুতাওয়াস-সিতাহ পর্যন্ত। তারপর বরুড়ার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া দারুল উলুমে ভর্তি হন। সেখানে হেদায়া পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পাড়ি জমান।প্রথমে সাহারানপুর জেলার বেরিতাজপুর মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে জালালাইন জামাত পড়া শেষ করেন। তারপর ভর্তি হন দারুল উলুম দেওবন্দে। সেখানে তিন বছরে লেখাপড়া শেষ করেন।
তারপর আল্লামা কাসেম নানুতুবীর প্রতিষ্ঠিত ভারতের মুজাফফার নগরের মুরাদিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে শরীয়তপুর জেলার মুহিউস সুন্নাহ মাদরাসায় শাইখুল হাদিস ও মুহতামিম পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসায় যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে চলে আসেন জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে। এরপর তিনি ১৯৮৮ সালে রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা সহ আরো বহু মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

নূর হোসাইন কাসেমীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ছিল। তিনি জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম সহ আরো বহু রাজনৈতিক সংঘঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।

স্মরনসভার সভাপতি ও দিলুরোড মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি সালাহ উদ্দিন দাঃবাঃ এর সভাপতিত্বে স্মরনসভা ও দোআ মাহফিলে আমন্ত্রিত মেহমানগন আলোচনা রাখেন।

আল্লামা সালাহ উদ্দিন বলেন,কাসেমী সাহেবের মৃত্যুতে বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পূরণ হবার নয়। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দেশ জাতির অধিকার এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় যে অবদান রেখেছেন তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল ও বেফাকুল মাদারিস এর মহাসচিব মুফতী মাহফুজুল হক বলেন,আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেবের চলে যাওয়াতে আমরা সবক্ষেত্রেই তার অভাব অনুভব করছি,কারন বলার মানুষের অভাব নেই, অভাব হলো কাজের মানুষের,তিনি ছিলেন উভয় ময়দানে সমান পারদর্শী।
সঠিক সিদ্ধান্ত,পরামর্শক হিসেবে তার অবদান অনশিকার্য।
তরুন ওলামায়ে কেরামের আস্থাভাজন,
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকার শায়খুল হাদিস আল্লামা মামুনুল হক সাহেব দাঃবাঃবলেন,
নূর হোসাইন কাসেমীর সমকালে তার মতো ছাত্র গড়ার অভিভাবক ও মাদরাসা পরিচালনা ও তত্বাবধায়ক আর কেহ ছিলো বলে আমার জানা নেই।
আল্লাহর হুকুমের জলান্জলী দেয়া হবে এমন কাজ করেন নি। তিনি ছিলেন সত্য-ন্যায়ের উপর অটল এক মহামনিষী।হতাশা কখনও তার কাঁধে ভর করতে পারেনি।এক কাসেমীর চলে যাওয়াতে শত পরিকল্পনা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে,শত কর্ম পরিচালনা স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। তার অনুপস্থিতিতে সর্ব লাইন আজ শুন্য দেখছি।
জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রধান মুফতী,বিশ্ব বরেণ্য লেখক আল্লামা মুফতী হিফজুর রহমান সাহেব দাঃবাঃ বলেন, আল্লামা কাসেমী ছিলো বাংলার মুখলিস আলেমদের অন্যতম একজন আলেম,বাতিলের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর,
বাতিলের বিরুদ্ধে আপোষহীন মর্দে মুজাহিদ,মানুষ(আলেম)গড়নে ওয়ালা এক অনন্য বক্তিত্ব।তার চলে যাওয়াতে আজ আমরা অভিবাবকহীন হয়ে পড়েছি।

জামিআ মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার শিক্ষাসচিব মাওলানা মকবুল হোসাইন দাঃবাঃ বলেন,কাসেমী ছিলো রাহবারে মিল্লাত, সর্বজ্ঞানে জ্ঞানী ও পন্ডিত মানুষ,বড় মনের অধিকারী,

আল্লামা কাসেমীর ভ্রাতা মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী বলেন, ছোট বেলা থেকেই কাসেমী সাহেব ছিলেন গুনাহ থেকে পরহেজগার, সবসময় তার চক্ষু থাকতো অবনমিত,যার কারনে এলাকার সবাই তাকে দরবেশ ডাকতো, ইলমী ময়দান সহ অন্য সব ময়দানে তিনি ছিলেন নীরব বিপ্লবী এক অসাধারণ প্রতিভাবান ব্যক্তি,

তার প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান জামিআ মাদানিয়া বারিধারার বর্তমান প্রিন্সিপ্যাল আল্লামা নাজমুল হক দাঃবাঃ বলেন, কাসেমী সাহেবের সাথে আমার দীর্ঘ দীনের চলা ফেরা,তিনি প্রত্যেক ময়দানেই ছিলেন যোগ্য সিপাহসালার।ইলমী,আমলী,তরবিয়তী ময়দানে তার তুলনা হয় না। আমার জীবনে তার মত অন্য কোন ব্যক্তিত্ব আর দেখা হয় নি।
তিনি ছিলেন দেওবন্দের পূর্ণ অনুসারী।

সর্বশেষে কাসেমীর সহকর্মী ও বারিধারার বর্তমান শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী ওবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেবের আলোচনা ও দোআর মাধ্যমে রাত ১১.৩০ এর পর স্মরনসভার ইতি ঘটে।

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *