খবর ডেক্সঃ- সিলেট পৌঁছে কর্মস্থলে যোগদানের আগেই বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমেদের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) নতুন কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ। এর একদিন পর রায়হানের শিশুকন্যা ও তার পরিবারের জন্য শুভেচ্ছা উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ায় রাহানের বাসায় পুলিশ কমিশনারের পক্ষে শুভেচ্ছা উপহারসামগ্রী নিয়ে যান এসএমপির তিন সিনিয়র কর্মকর্তা।
রাত পৌনে ১২টায় এসএমপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। উপহারসামগ্রীর মধ্যে শিশুখাদ্য ও শিশুর ব্যবহার্যের জিনিসপত্র, পোশাক ও আপেল-আঙুরসহ বিভিন্ন জাতের ফলমূল রয়েছে।
এসব উপহার নিয়ে যান সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রশাসন) তোফায়েল আহমদ, অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের এবং সহকারী কমিশনার (অর্থ) রাখী রানী দাস।
Advertisement
পরিবারের পক্ষে রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি ও সৎবাবা হাবিবুল্লাহ উপহারসামগ্রীগুলো গ্রহণ করেন।
গত ২৭ অক্টোবর সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন নিশারুল আরিফ। ওই রাতে সিলেট এসেই তিনি রায়হানের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান এবং রায়হান হত্যার ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের পর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।
এ ঘটনায় পরদিন (১২ অক্টোবর) রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
Advertisement
১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদরদফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইয়ের টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাষ্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি মরদেহ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।
নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন উঠে আসে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা ও ১৪টি গুরুতর জখম ছিল। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর দুপুরে ওই ফাঁড়ির কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ও ২৩ অক্টোবর কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে গ্রেফতারের পর পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। ২৫ অক্টোবর কনস্টেবল টিটুকে ফের তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।
ঘটনার দিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
এছাড়া গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি থেকে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।