জানুয়ারি ৩, ২০২১
৭:০৫ অপরাহ্ণ

সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রীবেশে ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া

খবর ডেক্সঃ- হঠাৎ করে সিলেট নগরীতে বেড়ে গেছে ছিনতাই। রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠছে ছিনতাইকারী চক্র। ছিনতাকারীদের হাত থেকে রেহাই মিলছে না খোদ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদেরও। রাতে রাস্তায় বেরুলে কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠলেই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হয়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে ছিনতাইকারীদের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ সময়ে ছিনতাইকারীদের হাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্মে অসহায় হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ নগরীর কিছু এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পরও তাদের লাগাম টানা যাচ্ছে না।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য আগের মতো নেই। বর্তমানে বিভিন্ন সড়কে পুলিশের তল্লাশি চৌকি বসানোসহ পেট্রোল ডিউটি করার কারণে ছিনতাই অনেক কমেছে। তাদের দাবি, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে।

কয়েকজন ভ‚ক্তভোগী বলছেন, নগরে বেড়ে গেছে চুরি, যাত্রীবেশে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। প্রায়ই কোনো না কোনো এলাকায় এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অটোরিকশা চলাকালীন নিরাপদ স্থান বুঝে ছিনতাইকারীরা যাত্রীবেশ থেকে নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ধারালো অস্ত্র কিংবা পিস্তল ধরে অটোরিকশার ওই যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইলসহ সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাকে নামিয়ে দিয়ে চম্পট দেয় তারা। অটোরিকশা চালকদের যোগসাজেসে প্রতিনিয়ত নগরীতে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সর্বশেষ সোমবার রাতে আম্বরখানা ইমন সরকার রাজিব নামের এক শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ সময় ছিনতাইকারী তার মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, নগরের অর্ধশতাধিক পয়েন্টে পেশাদার ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এসব এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ছিনতাইকারীরা আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকে। একেকটি অটোরিকশায় চালক ছাড়া আগে থেকেই দু’তিনজন ‘যাত্রী’ ওঠে বসে থাকেন। কোনো যাত্রী এলে তাকে অটোরিকশায় তুলে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে আগে থেকেই বসে থাকা যাত্রীরা কৌশলে ওই ব্যক্তিকে পেছনের সিটে মধ্যখানে কিংবা তাদের সুবিধাজনক জায়গায় বসিয়ে দেয়। এরপর অটোরিকশা চলাকালে সুযোগ বুঝেই যাত্রীর জিনিষপত্র হাতিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। আর কাজ শেষ হলেই ওই যাত্রীকে অন্ধকার স্থানে নামিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

মহানগরীর বন্দরবাজার-মেজরটিলা, আম্বরখানা-মদিনা মার্কেট, বন্দরবাজার-হুমায়ুন রশীদ চত্বর, টিলাগড়-আম্বরখানা, উপশহর-সোবহানীঘাট-বন্দরবাজার, বন্দরবাজার-আম্বরখানা, সুরমা পয়েন্ট-ওসমানী মেডিকেল, মদীনা মার্কেট-ভার্সিটি গেইট প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে থাকে। এসব সড়কে অটোরিকশা চলাকালীন নিরাপদ স্থান বুঝে ছিনতাইকারীরা যাত্রী বেশ থেকে নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ধারালো অস্ত্র কিংবা পিস্তল ধরে অটোরিকশার ওই যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইলসহ সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাকে নামিয়ে দিয়ে চম্পট দেয় তারা। বিভিন্ন ব্যাংক ও বড় বড় বিপণিবিতান সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি থাকে।

জানা যায়, ২৯ নভেম্বর দুপুরে কাজলশাহ এলাকায় জাহানারা বেগম ও মাহিন নামের এক যুবক ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওসমানী মেডিকেল কলেজের ২ নম্বর গেইট থেকে সিএনজি অটোরিকশা যোগে হাসপাতালের ষ্টাফ কোয়ার্টারে যাওয়ার পথে যাত্রীবেশে ছিনতকারীদের কবলে পড়েন। এ সময় ছিনকারীরা গলায় ছুরি ঠেকিয়ে তাদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ও স্বর্ণের চেইন, কানের দোল নিয়ে যায়। এরপর তাদেরকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।

এর আগে নগরীর ওসমানী শিশু পার্কের সামনে সুজন আহমদ নামের এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন, রুপার চেইন ও নগদ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

২৭ ডিসেম্বর বিকালে নগরীর টিলাগড়ের এমসি কলেজের গেটের সামনে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামায় দুই যুবক। একপর্যায়ে তারা যাত্রীদের পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা নিয়ে এমসি কলেজের ভেতরে দ্রæত চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে আটক করে এবং গণপিটুনি দেয়। এসব ঘটনা ছাড়াও গত দুই মাসে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বি.এম. আশরাফ উল্যাহ তাহের জালালাবাদকে বলেন, ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বন্ধ করতে পুলিশ সব সময় সক্রিয় রয়েছে। প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়। এককভাবে পুলিশের পক্ষে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ কঠিন। এজন্য নগরবাসীর সচেতনতার প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *