খবর ডেক্সঃ-সিলেটে দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। বিগত কয়েকমাস আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা কমলেও শীতের শুরু থেকে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু সংক্রমণ বাড়লেও মাস্ক ব্যবহার তেমন বাড়ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় কঠোর নির্দেশনা দেয়ার পরও মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি উপেক্ষিত। শীত আসার পর থেকে করোনা যত শক্তিশালী হচ্ছে, মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিও যেন ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, মাস্কই এখন ভ্যাকসিন। মাস্কের বিকল্প নেই। শীতে করোনার দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ থেকে রক্ষার বড় হাতিয়ার মাস্ক। অনেক ক্ষেত্রে টিকার চেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে মাস্ক। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, ‘শীত নিয়ে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের যে আশঙ্কা ছিলো, সেটিই হচ্ছে। সংক্রমণ বাড়ছে , তবু মাস্ক ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে সিলেটের মানুষ। কয়েক দফায় সরকারি কঠোর নির্দেশনার পরও সবার মধ্যে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে সামনের দিনগুলো নিয়ে আমাদের দু:শ্চিন্তা বাড়ছে।’
অদৃশ্য মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় সারা দেশের মতো সিলেটেও অনেকে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। তবে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে করোনা ভাইরাস কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সারা দেশের মতো সিলেটেও তখন কমে আসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। এই বাস্তবতায় বিশ্বের অনেক দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক কিছুই খুলে দেয়। পৃথিবীর দেশে দেশে সবকিছু খুলে দিলেও শীত মৌসুম নিয়ে সবার মধ্যে বাড়তি উৎকণ্ঠা ছিলো। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে শীত পড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে করোনার আস্ফালন।
সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু রায় জানান, ‘মাস্কই এখন ভ্যাকসিন। মাস্কের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগীয় শহরে মাস্কের ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু সিলেটে হচ্ছে না, আমাদের বাধা কোথায়?’
শীতের শুরু থেকেই সারা দেশের মতো সিলেটেও নভেম্বর মাসে সংক্রমণের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী দেখা যায়। শুরু থেকে চলতি মাসের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪,২৮৪ জন। এর মধ্যে চার জেলায় আক্রান্ত হয়ে ২৪০ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে সিলেট জেলায় ১৭৭, সুনামগঞ্জ ২৫, হবিগঞ্জ ১৬ এবং মৌলভীবাজারে ২২ জন।
এছাড়া, গত ১৪ নভেম্বর ২২ জন, ১৫ নভেম্বর ২৯ জন, ১৬ নভেম্বর ৪১ জন এবং ১৭ নভেম্বর সিলেটে ২৭ জন করোনায় আক্রান্ত হন। সেই হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, সিলেটে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শীতের শুরু থেকে এভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোথাও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। সবখানে ঢিলেঢালা অবস্থা। সমাজের গুটিকয়েক মানুষ কিংবা সংস্থা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, অন্যকেও সচেতন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিষয়টিকে তোয়াক্কা করছেন না। বিশেষ করে হাটবাজারের চিত্র দেখে আৎকে উঠতে হয়। অবস্থা দেখে মনে হয়, মানুষ যেন করোনা ভাইরাসকে সহযোগিতা করছেন। অথচ সরকার মাস্ক ব্যবহারে বেশ কয়েক দফা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্যকারীকে জরিমানাও গুণতে হয়েছে। কিন্তু তবুও মাস্ক ব্যবহার তেমন বাড়ছে না।
এবিএম ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এ কে এম আতাউল করিম জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ সিলেট শীতপ্রবণ এলাকা। নভেম্বর থেকেই শীত শুরু হয়ে গেছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি হয়তো আরো তীব্র শীত পড়বে। তিনি বলেন, শীতকে গুরুত্ব না দিলে হয়তো আমাদের বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে। আমাদের অকালে হারাতে হতে পারে প্রিয়জনদের।’
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এটিএম শোয়েব জানান, ‘সরকার শীতের আগ থেকে একের পর এক কঠোর নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। কিন্তু মানুষ সেই বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছেন না। এটি আমাদের জন্য চরম উৎকণ্ঠার। সারা বিশ্বের যত দেশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি তারা ঠিকই মাশুল দিয়ে যাচ্ছেন। শীতে নতুন করে অনেক দেশ সংক্রমিত হচ্ছে। সমানতালে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া দরকার।’
এদিকে, সংক্রমণ রুখতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার উপর গুরুত্বরোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুবা সংক্রমণের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বাড়বে। এ প্রসঙ্গে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। মাস্ক ছাড়া কাউকে আমরা সেবা দিচ্ছি না।
তিনি আরো বলেন, সিলেট নগরীতে পুলিশ পক্ষ শুরু হবে ১ ডিসেম্বর। তখন আমরা মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেবো।’
নভেম্বর ২১, ২০২০
১০:১৩ পূর্বাহ্ণ