নভেম্বর ১১, ২০২০
১১:২৯ অপরাহ্ণ

হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত

বিশেষ প্রতিনিধি: ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের ক্বওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন “হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ”।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি বিভিন্ন সময় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ইসলামীবিরোধী ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। হেফাজতে ইসলামের মূল শক্তি ক্বওমী মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসাগুলো হতে শিক্ষা লাভ করা ক্বওমী আলেম ও শিক্ষার্থীগণ। ইসলামের হেফাজত এবং ক্বওমীদের স্বার্থ রক্ষায় আল্লামা শফী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের পরিচিতি সারা বিশ্বেই রয়েছে।

সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিলকে ঘিরে তোড়জোড় শুরু করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম। তারা বিভিন্ন ভাবে লবিং করতেছে যাতে তাদের মনোনীতরাই নেতৃত্বের আসনে আসীন হয়।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু পরবর্তী হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি গঠনের জন্য চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। ইতোমধ্যে সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে যাদের অনেকের সরাসরি বিএনপি-জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতা ও যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকেই ক্বওমী আলেমদের সাথে জামায়াতে ইসলামের আক্বীদাগত (আদর্শগত) পার্থক্য বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানীদের পক্ষ অবলম্বন করায় ক্বওমী আলেমদের সাথে জামায়াতের আরও বেশি দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ক্বওমী আলেমদের গ্রহণযোগ্যতা সমাজে বৃদ্ধি পেতে থাকলেও বিতর্কিত কর্মকান্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় জামায়াতে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা সমাজে কমতে থাকে। বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে জামায়াতে ইসলাম।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও ক্বওমী মাদ্রাসাগুলোকে তাদের দখল নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রশিবির ১৯৮৫ সালে ক্বওমী অঙ্গনের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় আক্রমণ করে মাদ্রাসাটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে তা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় তিনজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তৎকালীন মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফী কর্তৃক ১০ জন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে মাদ্রাসায় হামলা হয় যাতে ১০-১৫ জন আহত হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখ আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পূর্ব থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামায়াতে ইসলামের দোসররা ব্যাপকভাবে আনাগোনা শুরু করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসার উপর তারা বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে থাকে।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিলকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিদিনই উক্ত কাউন্সিলের কমিটি গঠনের জন্য বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শী হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা নিয়মিত গোপন বৈঠক করে হেফাজতের কমিটির তালিকা তৈরি করছেন। তালিকাটি কাউন্সিলের দিন মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছে একটি সুত্র।

অন্যদিকে হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকে হেফাজতের মহাসচিব করার জন্য বিএনপি-জামায়াত ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য নূর হোসাইন কাসেমীসহ একটি চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে করে হেফাজতের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হাটহাজারীর প্রভাবমুক্ত এবং ঢাকা কেন্দ্রিক করা যায়।

হেফাজতের নেতৃত্ব পুরোপুরি দখলে নেওয়ার জন্য আল্লামা শফীপন্থী কোন আলেমকে হেফাজতের নতুন কমিটিতে রাখা হবে না বলে শফীপন্থী আলেমগণ আশঙ্কা করছেন।

হেফাজতের নেতৃত্ব ঢাকাকেন্দ্রিক করার মাধ্যমে অরাজনৈতিক ক্বওমী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নামের সংগঠনটি জামায়াত দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে চট্টগ্রামের সিনিয়র আলেমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা ভবিষ্যতে হেফাজতের ভাঙনের কারণ হতে পারে।

শেয়ার করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *