একটা বিশ্বকাপ ট্রফি নেই বলে কতোই না তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়েছে নিন্দুকদের কাছে। সব হিসেব যেন জমিয়ে রেখেছিলেন কাতার বিশ্বকাপের জন্য। অবশেষে জবাবটা দিলেন বিশ্বকাপ জিতেই। তার হাত ধরেই ৩৬ বছরের শিরোপা খরা ঘুচল আর্জেন্টিনার।
সেই সাথে মেসি পেল অমরত্ব। এখন আর কেউ বলতে দ্বিধা করবে না মেসিই সেরা।
২০১৪ বিশ্বকাপে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের খুব কাছে গিয়েও চোখে পানি নিয়ে ফিরতে হয়েছিল মেসিকে। তবে এবার আর সেটি হয়নি।
নিজের শেষ বিশ্বকাপটা ট্রফি জিতেই রাঙালেন এলএমটেন। ম্যাচে পেনাল্টিতে ৪-২ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুললো আর্জেন্টিনা। জোড়া গোলের দেখা পেলো মেসি।
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৯০ হাজার সমর্থকদের সিংহভাগই এদিন এসেছিল মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে। ম্যাচের শুরু থেকে সে পথেই হাঁটছিল মেসিরা। বল দখলে রেখে আক্রমণে গিয়ে ২ গোল আদায় করে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
তবে বিধাতা বোধহয় খুব সহজেই কাউকে কিছু দেন না। অমরত্ব পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা মেসিকে অপেক্ষা করিয়ে রাখলেন দ্বিতীয়ার্ধের নাটকীয়তা দেখার জন্য। এমবাপ্পের জোড়া গোলে ম্যাচে ফেরে ফ্রান্স। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ তখন আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। মনে ভয়, এই বুঝি তীরে এসে তরী ডুবল। ম্যাচ গড়াল অতিরিক্ত সময়ে।
এখানে এসে আবারো লিড নিল আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ১০৮ মিনিটের সময় গোল করে ব্যবধান গড়ে দেন মেসি। বনে যান আর্জেন্টিনার স্বপ্নে সারথী হিসেবে। তবে তখনো যেন নাটকীয়তার শেষ অংশটুকু বাকি। ম্যাচের ১১৫ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর হাতে বল লাগে গঞ্জ্যালো মন্টিনেলের। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। গোল করে হ্যাটট্রিক আদায় করেন এমবাপ্পে। আবারো সমতায় আসে ম্যাচ।
তবে আর্জেন্টিনাকে পথ দেখিয়েছেন তাদের বাজপাখি। কোম্যানের নেওয়া দ্বিতীয় পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে মনোবল ভেঙে দেন ফ্রান্সের। এরপর ছুয়ামেনি জালের সন্ধান না পেলে সহজেই জয় পায় আর্জেন্টিনা। সেই সাথে মেসি পায় অমরত্ব।
ফুটবল বিধাতা আর হতাশ করেননি মেসির হাতে শিরোপা দেখতে চাওয়া সারা বিশ্বের সমর্থকদের। কেবল পরীক্ষা নিয়েছেন। সেই সাথে উদযাপনের রেশ বাড়াতে সাহায্য করেছেন।
এর আগে প্রথমার্ধে একের পর এক আক্রমণে যাওয়ার চাপে ম্যাচের ২১ মিনিটে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। গোল করে ম্যাচে লিড এনে দেন মেসি। এরপর ম্যাচের ৩৬ মিনিটে ডি মারিয়ার গোলে ব্যবধান ২-০ করে আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালায় দেশমের দল। ম্যাচের ৮০ মিনিটে পেনাল্টির কল্যাণে ব্যবধান কমান এমবাপ্পে। সেই উদযাপনের রেশ না কাটতেই আরো এক গোল হজম করতে হয় আর্জেন্টিনাকে। দারুণ গোলে দলকে সমতায় ফেরান এমবাপ্পে।
খেলা তখন এমবাপ্পে এবং মেসির। পিএসজির দুই সতীর্থের লড়াইটা বেশ জমে যায়। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন একটু পরপরই। তবে গোল্ডেন বুটের দৌড়ে মেসিকে ছাড়িয়ে গেলেও হাসি কেড়ে নিতে পারেননি তিনি। দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে শেষ হাসিটা হেসেছেন মেসিই।